গৌরীশংকর মহাপাত্র: দৈনিক আবেশভূমি ডেস্ক; এগরা কাঁথি: পূর্ব মেদিনীপুর।জীবন-মৃত্যুর টানাপোড়েন শেষে বুধবার সকাল প্রায়৫-১৫ তে না ফেরার দেশে পাড়ি দুই জেলার সৃজনশীল সাহিত্যের ডাকাবুকো থীম সং স্রষ্টা কবি সুরকার হেমন্ত জায়া সন্ধ্যা মাইতির।শনিবার সকালে খবর ছড়িয়ে পড়ে গভীর রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত কোমাচ্ছন্ন সন্ধ্যা দি’ ভর্তি এগরার বেসরকারি হাসপাতাল ‘ওম শ্রীগুরু”র আই সি ইউ তে।বুধবার সকালে ডাক্তার ও পরিবার পরিজনদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে পাড়ি দিলেন না ফেরার দেশে অসীমের উদ্যেশ্যে। দুটি কিডনি বিকল অনেক আগেই, সপ্তাহে ৩ দিন ডায়ালাইসিস চলছিল প্রায় দু বৎসরের অধিককাল। এগরার এই হাসপাতালে ডায়ালাইসিসে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন তিনি। এই বেসরকারী হাসপাতালের স্বচ্ছল পরিষেবা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও পরিচ্ছন্ন ব্যবহারের প্রসংশা করতেন এবং শেষের দিকে
নিজের ঘরের মতইভেবে ডায়ালাইসিসে চলে আসতেন। জীবনে একটিও কবিতা না লিখেন নি ঠিকই ,তবে সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ ও সাহিত্য প্রীতিতে কবি হেমন্ত মাইতির সমগ্ৰ কবি জীবন’কে প্রভাবিত করে স্থান করে নিয়েছেন তার কাব্য কবিতায়। হেমন্ত মাইতির গল্প, গল্প সংকলন, গানের স্বরলিপি প্রভৃতি প্রকাশিত প্রায় ১৭বই প্রকাশনার অনুপ্রেরণা তিনিই। তাঁর অসুস্থতার শেষ ৪ বৎসরে কবির লেখা সৃজনশীল সাহিত্যের সংখ্যা যেমন বেশি তেমনি নির্ভরতা ও প্রখর। দুই জেলার সাহিত্য অনুরাগী যারা কবি হেমন্ত মাইতি বা আধুনিক প্রজন্মের উদিয়মান তাঁর কবি পুত্র মানস মাইতির টানে বাড়ি এছেন, তার ধীর, শান্ত, হাস্যময়ী সন্ধ্যাদি’র আপ্যায়ন কৌশল, সাহিত্যিক ও সাহিত্য প্রেমীদের প্রতি তাঁর মানসিকতা, অমায়িক ব্যবহার তাদের সবার স্মৃতিকে নাড়া দেয়। মঙ্গলবার সোস্যাল মিডিয়ায় কবির আই সি ইউতে ভর্তি প্রিয়তমা’র উদ্যেশ্যে আহ্বান-“কোমা থেকে তুমি ফিরে এসো প্রিয়তমা, ডায়ালাইসিস কালে তবু সঙ্গসুখ ছিল।”তখন থেকে প্রিয়জনদের অজস্র প্রার্থনা মঙ্গল ময়ের কাছে। কারুর ডাক সাড়া না দিয়ে ঠাকুর তাকে নিয়ে গেলেন না ফেরার দেশে। যাবার কালে রেখে গেলেন কবিকে, কবিপুত্র মানস ও পুত্রবধূ সোমা, দুই মেয়ে ও জামাতা, নাতি নাতনি ও অসংখ্য গুনমুগ্ব পরিজনদের। শেষ যাত্রায় তাকে শেষশ্রদ্ধা জ্ঞাপন শেষে সন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানান ডা: এন কে প্রধান, ডা:রায়, নবকান্ত জানা, কবি মনতোষ আচার্য প্রমুখ বিদগ্ধজন। শোক জ্ঞাপনকরে আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক মন্মথ নাথ দাস বলেন- “বন্ধু হেমন্তবাবুর পত্নীবিয়োগে গভীরভাবে ব্যথিত। অমৃতপথযাত্রীকে শ্রদ্ধা জানাই। শোকার্ত পরিজনবর্গকে জানাই আন্তরিক সমবেদনা।প্রার্থনা করি তারা এ দুঃখবহণের শক্তি লাভ করুক।” অধ্যাপক ড:মৃনাল কান্তিদাস জানান- জীবনেরে কে রাখিতে পারে/ আকাশের প্রতি তারা ডাকিছে তাহারে/ তার নিমন্ত্রণ লোকে লোকে নব নব পূর্বাচলে আলোকে আলোকে। আমরা স্মৃতিভারে পড়ে আছি, ভারমুক্ত সেখানে নেই। এই তো মানুষের জন্য নির্ধারিত। শান্ত ও স্থির থাকুন হেমন্তদা। আদর্শ ছেলে ,বৌমা, নাতি সহ আত্মীয়-স্বজন সবাই আপনার কাছে আছেন। আর শক্ত হাতে ধরে রাখুন আপনার গান ও কবিতার ভূমি।ড:কালীপদ প্রধান বলেন-“আমি হেমন্তদা ও পরিবারের সকলের প্রতি সমবেদনা জানাই, তারা যাতে সুস্থ ও নীরোগ অবস্থায় থাকতে পারেন, জীবন দেবতার কাছে সেই প্রার্থনা করি।” এগরা প্রেসক্লাব সভাপতি ও এগরা মহাকুমা বইমেলার কার্যকরী সভাপতি বীরকুমার শী বলেন- “আমাদের প্রিয় সদস্য মানস মাইতির মাতৃবিয়োগ এবং সংস্থার সহ-সভাপতি হেমন্ত মাইতির সহধর্মিনীর বিয়োগ ব্যথায় ব্যথিত। দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন সংস্থার পক্ষ থেকে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করি, পরম কারুণিকের কাছে প্রার্থনা করি, বিদেহী আত্মা যেন তার কাঙ্খিত লোক প্রাপ্তহন।” আজ বিদায় কালে বাল্যের বহু স্মৃতি মনকে ভারাক্রান্ত করে, চোখ ঝাপসা হয় জলে। তখন ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র, পিসতুতো দিদি আমার বাড়ি এসেছে কয়েক দিন, কি লুকোচুরি খেলায় মেতে পড়াশুনো লাটে। তখন কাঁথি ইটেবেড়িয়া শ্রীশংকর নামের একটি বাস সারা দিনে দুবার ছাড়ত তাহালিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে। আমি দিদির সঙ্গে বড় নিহারী পিসির বাড়ি যাওয়ার বায়না ধরেছি, সে কি উৎপাত; এখনের মত তখন যাতায়াত অত সহজ ছিল না বলেই বাবার আপত্তি। তাও সেই প্রথম দিদির হাত ধরে খড়াই মোড় পেরানো। “এগরা মহকুমা বই মেলা”- নিয়ে জামাইবাবু হেমন্তদা ও ভাগ্নে মানসদের সহযোগিতা প্রবল, তেমনি দিদির প্রশ্রয়ছিল বিস্তর। মেলার দিনগুলোতে আমার জুলুমও তাকে সইতে দেখেছি নীরবে। আজ তার স্মৃতি বড় পীড়াদায়ক। দিদি তুমি মানসদের বাপ ছেলের জন্যে ভেবো না। তোমার দেখে যাওয়া জোড়া তবলচি নাতি বড় সম্ভাবনাময় , ওরা প্রতিষ্ঠাপাবেই। ভেবে না শান্তশীলা কর্মযোগী বৌমা সোমাকে নিয়েও। তুমি যেখানে থাকো ভালো থেকো চিন্তা করো না।