প্রতিবেদন- গৌরীশংকর মহাপাত্রঃআজ বাংলার বাঘ আশু।তোষ মুখোপাধ্যাযের মৃত্যু দিন। অবসর পরবর্তী মামলার কারনে তিনি কোলকাতা বিহার যাতায়াত করতেন, বিহারের পটনায় হঠাৎ অসুস্থ এবং ১৯২৪এর আজকের দিনে বিহারের পাটনায় তাঁর আকষ্মিক মৃত্যু।
১৮৬৪ শে ৩৯ শে জুন কোলকাতার বউ বাজারে আশুতোষের জন্ম। বাবা বিখ্যাত চিকিৎসক গঙ্গাপ্রসাদ ও মা জগত্তারিণী। ১৮৮৫তে যোগমায়া দেবীর সঙ্গে পরিনয় সূত্রে আবদ্ব এবং শ্যামাপ্রসাদ ,উমাপ্রসাদ এবং কমলা মুখোপাধ্যায়ের পিতা হন।
মেধাবী আশুতোষের বরাবর গণিতশাস্ত্রে ছিল অসাধারণ পান্ডিত্য। ১৮৭৯এ এন্ট্রান্সে দ্বিতীয় স্থান, ১৮৮১’র এফ এ তে তৃতীয় স্থান, বি এ পরীক্ষায় তিনটি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট। এম এ তে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট। ১৮৮৪ তে ‘ঈষাণ বৃত্তি’ পরের বৎসর প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি প্রাপ্তি ও ফিজিক্সে এমএ পাশ। তিনিই প্রথম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে (গণিত ও পদর্থবিদ্যা) দুটি বিষয়ে এমএ করেন। তখনকার দিনে আজকের দিনের মত বিজ্ঞানের এই বিষয় গুলি আর্টসের বিষয়ে যুক্ত ছিল। পরে ওকালতি পাশ ও আইন ব্যবসায় কর্মজীবন শুরু। তাঁর রচিত কুড়িটি মূল্যবান প্রবন্ধের কয়েকটি বিদেশেও সমাদৃত। কর্মজীবনে ইংরেজদের সমমর্যাদা দাবীদার।
রাজনৈতিক জীবনে কর্পোরেশনের সদস্য এবং ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্য হয়েছেন। ১৯বৎসর কোলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি, মাঝে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব। বিচারপতি হয়ে নিজেকে রাজনৈতিক বৃত্তের বাইরে রাখেন।
শিক্ষাক্ষেত্রে সেনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য হন। মাতৃভাষায় শিক্ষার প্রসারের তিনিই প্রথম প্রস্তাবক। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দ্বিতীয় ভারতীয় উপাচার্য১৯০৬-১৯১৪ সময় কালে ৬টি টার্মে ছিলেন।এই সময় কালে সাম্রাজ্যবাদের প্রতিকূলতা উপেক্ষাকরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি স্বয়ং শাসিত প্রতিষ্ঠানে রূপ দেন। ১৯২১-১৯২৩ দ্বিতীয়বার কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হন এবং কলা ও বিজ্ঞান শাখার পি জি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট। ১৯৮৭-১৯৯১ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বাঙ্গালী গণিত বিষয়ের পরীক্ষক।১৯০৬এ টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট এবং ১৯৪৪এ কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান কলেজের ভিত্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করেন। দেশের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি ভাষায় পঠন-পাঠন ও বেশি বিভাগ চালুর কৃতিত্ব শ্যামাপ্রসাদের। তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মায়ের নামে ‘জগত্তারিণী’ স্বর্ণপদক প্রবর্তন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুসন্ধান বিষয়ে স্যাডলার কমিশনের সদস্য ,তিনবার এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি, ন্যাশনাল লাইব্রেরী কাউন্সিলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। নিজ বিধবা কন্যার পুনর্বিবাহ দিয়ে সংসার মুক্ত সামাজিক চেতনার পরিচয় দিয়েছেন।
পালি, ফারসি ও রুশ ভাষায় অভিজ্ঞ আশুতোষের প্রবন্ধ সংকলন ‘জাতীয় সাহিত্য’ বাংলা সাহিত্যের সম্পদ। প্রকাশিত গ্ৰন্থ- ‘প্রস্তর স্বাক্ষর’, ‘পঞ্চতপা’, ‘চলাচল’, ‘আনন্দরূপ’, ‘আশ্রয়’, ‘একাল ও কাল’ প্রভৃতি।
১৯২৩এ গভর্নর শর্তসাপেক্ষে আশুতোষকে উপাচার্য করতে চাইলেও তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। সাম্রাজ্যবাদ শক্তির বিরুদ্ধে মেরুদন্ড সোজা রেখে প্রতিবাদ, নিজের সিদ্ধান্তে অনমনীয়তা,তার বিচক্ষণতা, উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরনের উন্মেষ পর্বকে প্রভাবিত করা্সহ আধুনিক ভারত নির্মাণে তার চিন্তা ও প্রয়াস অনেক খানি প্রভাবিত করে। সেই সময় দেশবাসী তাঁকে বাংলার বাঘ আখ্যায় ভূষিত করেন। তার দৃঢ়তার নজির নিয়ে বহু ঘটনার একটি বলি – তখনকার দিনে ব্রিটিশ শ্বেতাঙ্গদের নানান হায়রানির শিকার হতে হত বাঙ্গালীদের। একদিন প্রশাসনিক কাজে আলিগড় যাচ্ছেন ট্রেনে করে, সঙ্গে এক মিলিটারী অফিসার। যাত্রা পথে অফিসার আশুতোষের খোলা রাখা জুতোটি বাইরে ছুঁড়ে দেন, কিছু পরে অফিসার কোটটি খুলে রেখে ঘুমিয়ে পড়লে আশুতোষ তার কোট টি বাইরে ছুড়ে দেন। ঘুম ভাঙতেই অফিসার কোট না পেয়ে চেঁচামেচি শুরু করলে আশুতোষ জানালেন তার কোটটি জুতো খুঁজতে গেছে। এমনই দৃঢ ছিল তার চরিত্র। শিলাজুত সিংহলের মহাবোধি সোসাইটি ‘সম্বুদ্ধাগম চক্রবর্তী’ উপাধি ও দেশীয় পণ্ডিতগণ ‘সরস্বতী’ এবং ‘বাচস্পতি’ উপাধিতে সম্মানিত করেন। আশুতোষ কলেজ ও শ্যামাপ্রসাদ কলেজ তার ও তার পুত্র শ্যামাপ্রসাদের নামাঙ্কিত। ভারতবর্ষের অন্য কোথাও পিতা-পুত্রের নামে দুটি কলেজ আছে কিনা সন্দেহ। আনন্দবাজার পত্রিকায় তার মৃত্যু পরবর্তী সংবাদ শিরোনাম হয় ‘বাংলার নব শার্দুল আশুতোষের মহাপ্রয়ান।’
তথ্য সূত্র: ১) ” প্রতিদিন জন্মদিন মৃত্যু দিন এবং”-বীরকুমার শী।
২) ইউকিপিডিয়া ৩)লাইফ পার্সেল চ্যানেল।