নিজস্ব সংবাদদাতা, মেদিনীপুর : নারী অত্যাচার নিয়ে বিশেষ সেমিনারে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা কলেজের সেমিনার হল থেকে প্রায় সব বক্তারাই তুলে ধরেন বর্তমান সমাজে নারী স্বাধীনতার গুরুত্ব এবং সর্বোপরি নারীদের গুরুত্ব সম্পর্কে।যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে নারী অত্যাচারের সংখ্যা।তার কম যায়না পশ্চিমবঙ্গ।
পশ্চিমবঙ্গের কামদুনি ঘটনা থেকে ভারতবর্ষের নির্ভয়া ধর্ষন কান্ড প্রত্যেকটি ঘটনার চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন উপস্থিত এর সকল অধ্যাপক অধ্যাপিকারা
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজে বিভিন্ন সেমিনারে পাশাপাশি নারীদের উপর অত্যাচার সম্পর্কীয় রাজ্য ভিত্তিক বিশেষ সেমিনারের আয়োজন করা হয় বেলদা কলেজ শিক্ষা বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের পক্ষ থেকে।
বৃহস্পতিবার বেলদা কলেজের সেমিনার হলে আয়োজিত হয় জাতীয় স্তরের এই বিশেষ সেমিনারের।প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নেতাজি ইনস্টিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডিজ এর অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অপূর্ব মুখোপাধ্যায়।নারী স্বাধীনতা নারীর সচেতনতা এবং নারী অত্যাচারের প্রভাব সম্পর্কে এই বিশেষ আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক অরিন্দম রায়,অরিজিৎ ভট্টাচার্য্য।বেলদা কলেজে এই সেমিনারের আয়োজন করেন শিক্ষা বিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান ড. সুচেতা সেন,তুহিন কান্তি দাস এবং সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক অশোক ব্যানার্জি সহ প্রমুখ ও ব্যক্তিত্ব।
মহা বিদ্যালয়ের শিক্ষা বিজ্ঞানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক তুহিন কান্তি দাস তার বক্তব্যে বলেন -“আগের তুলনায় বর্তমান দিনে সমাজে মেয়েদের উপর অত্যাচার এর পরিমাণ প্রায় আশি শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।যে অত্যাচার শুধুমাত্র সমাজে পুরুষকেন্দ্রিক অত্যাচার।”বর্তমানে নারী স্বাধীনতা এবং নারী সচেতনতা সম্পর্কে বিশেষ আলোচনা দেওয়া হয় ছাত্র-ছাত্রীদের।উপস্থিত অধ্যাপক অরিন্দম রায় বলেন-“বর্তমান সমাজে নারীরা অবহেলিত নিপীড়িত লাঞ্ছিত।তার একটাই কারণ তারা বংশ-পরম্পরা সূত্রে সেইভাবেই শিক্ষা পেয়ে আসছে।তারা জন্মলগ্ন থেকে শিখে আসছে সমাজে পুরুষ হল সর্বপ্রধান,নারীদের অবস্থান তারপরেই।তাই আজ সমাজে নারীদের এই অত্যাচারের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে নারীরাই।এইসবই মোকাবিলা করতে পারে একজন মেয়ে।বিদ্যালয় মহাবিদ্যালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজেকে সচেতন করে সমাজকে সচেতন করতে পারলেই একমাত্র প্রতিকার করা যাবে নারী অত্যাচারের।”এই দিন ছাত্রছাত্রীদের অডিও ভিজুয়াল এর মাধ্যমে নারী অত্যাচার নারী স্বাধীনতা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অরিজিৎ ভট্টাচার্য।তিনি তার গবেষণার বিষয়বস্তু হিসেবে ডিনাইন ভায়োলেন্স কে তুলে ধরেন।তিনি বলেন-“আমরা সামাজিক কিংবা পারিবারিকভাবে ছেলে মেয়েদের লিঙ্গ গত ভাবে আলাদা করে দেই।জন্মের আগে থেকেই কিংবা জন্মের পর প্রাথমিক ভাবে আলোচনা করতে থাকি ওই সন্তানটি ছেলে নাকি মেয়ে?যা কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এক লিঙ্গ ভেদে অন্ধকার যুগে নিয়ে যাচ্ছে।যা আজ রূপ নিচ্ছে ধর্ষন খুন কিংবা নারী অত্যাচারে।”
এই দিনের প্রধান বক্তা বিশেষ কিছু সামাজিক ব্যাখ্যা এবং নিজের নিজস্ব কিছু উদাহরণের মাধ্যমে নারীদের সমাজে অবস্থানের ব্যখা দিয়েছেন।নেতাজি ইনস্টিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডিজের অবসরপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক অপূর্ব মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন-“নারী অত্যাচার এবং নারী পরাধীনতা সম্পর্কে গার্হস্থ্য জীবন থেকে আন্দোলন করতে হবে।নিজেদের বাবা-মার সঙ্গে বাকযুদ্ধ করেই সমাজে মেয়েদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”নারীদের উপর অত্যাচার কেন হয় কেনইবা সর্বক্ষেত্রে তারা অত্যাচারের শিকার হয় তার কিছু গুরুত্ব বিশ্লেষণ করেন অধ্যাপক।তিনি বলেন-“শুধুমাত্র কি পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য নারীদের উপর অত্যাচার নাকি দৈহিক ভাবে স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য নারীদের ওপর নির্যাতন খুন কিংবা ধর্ষণ?আমরা দেখছি নারীরা পুরুষের থেকে কোন অংশেই দূর্বল নয়।তাই একেবারেই নিজেদের বাড়ি থেকে সমাজের প্রত্যেকটা অংশে নারী স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।