গৌরীশংকর মহাপাত্র, আবেশভূমি ডিজিটাল:- বন দফতরের মহিলা আধিকারীককে প্রকাশ্যে ‘ড্যাং দিয়ে পেটাবে’ বলে হুঁশিয়ারি দিলেন মন্ত্রী অখিল গিরি। কন্টাই ফরেস্ট রেঞ্জের মহিলা আধিকারীককে ‘বেয়াদপ, সরকারের চাকর’ বলেও কটাক্ষ করে রামনগরের তৃণমূল বিধায়ক। শমিবার তাজপুর সৈকতে বন দফতরের জায়গায় হকার উচ্ছেদ ঘিরে ওই মহিলা আধিকারীকের সঙ্গে বিতন্ডায় মুখের খিল হারিয়ে বিতর্কে জড়ান মন্ত্রী অখিল গিরি। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পরেই রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায়। 

যদিও অখিলের যুক্তি, ‘ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যেই অমানবিক ভাবে ব্যবসায়ীদের মাথার ছাউনি ভেঙে দিয়েছেন ওই আধিকারীক। তারই প্রতিবাদে এলাকাবাসীরা চরম ক্ষুব্ধ ছিলেন। এই নিয়েই ওই আধিকারীকের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। তবে এই নিয়ে অযথা জলঘোলা করা ঠিক নয়” বলেই অখিলের দাবী। 

    অখিলের অভিযোগ, গত কয়েকদিনে সমূদ্র ভাঙনে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাজপুরের সমুদ্র সৈকতের পাশে থাকা প্রায় ২৫টি দোকান। সেই দোকানগুলিকেই কিছুটা পিছিয়ে বসতে বলা হয়েছিল। সেই সঙ্গে সমূদ্র পাড় বাঁধানোর কাজে সহযোগিতা করতেও ওই ব্যবসায়ীরা সরে যান। পেছনেই ফরেস্টের জায়গায় ওই অস্থায়ী দোকানগুলি বাঁধে। সেই খবর পেয়েই কন্টাই ফরেস্ট রেঞ্জার মনীষা সাউ দলবল নিয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের মাঝে গভীর রাতে ওই দোকানগুলিকে করাত দিয়ে কেটে নষ্ট করে দেয়। এর জেরে স্থানীয়রা ব্যাপক সমস্যায় পড়েন। 

    এই ঘটনার খবর পেয়েই শনিবার বেলার দিকে এলাকায় যান অখিল। সেখানে মহিলা ফরেস্ট রেঞ্জারের উদ্দেশ্যে অখিলের মন্তব্য, “আপনি কতবড় অফিসার আমি দেখে নেব। আপনি যেখানে ডিউটি করছেন সেখান থেকে আপনাকে তুলে দেব”। ক্ষুব্ধ অখিল মহিলা আধিকারীককে ধমক দিয়ে বলেন, “রাত্রি ১১টায় কেন এসে দোকান ভেঙেছেন। আপনাকে কে নাইট ডিউটি করতে বলেছে” প্রশ্ন তুলেন অখিল। এরপরেই অখিলের উক্তি, “ফরেস্ট অফিসারের কি দুর্নীতি আমি জানি। আপনাদের বিরুদ্ধে মানুষের কি অভিযোগ আছে সব বিধানসভায় আমি ফাঁস করে দেব”।

    অখিলের মতে, “আপনি এখানে থাকবেন না। ওরা সারা জীবন এখানে থাকবে। আপনি কারও কথা শুনতে চান না। এতবড় ক্ষমতা আপনি কোথা থেকে পেয়েছেন”। বিতন্ডার মাঝেই অখিলের উক্তি, “আপনি যদি এরপর এই জায়গায় আসেন তাহলে আপনি এখান থেকে ফিরে যেতে পারবেন না। একজন বেয়াদপ রেঞ্জার। আপনি সরকারের চাকর। মাথা নীচু করে কথা বলবেন। আপনি একদম বেয়াদপী করবেন না। আপনাকে যখন সবাই ডাঙ দিয়ে পেটাবে তখন দেখবেন”। এইভাবেই বেশ কিছু সময় চরম বিতন্ডার পর দোকানদারদের ওই এলাকায় অস্থায়ী ছাউনি বানানোর জায়গা দেখিয়ে দিয়ে ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান অখিল।

      পরে নিজের বক্তব্যের সমর্থনে অখিল জানান, “আমাদের কন্টাইয়ের ফরেস্ট রেঞ্জারের সঙ্গে সামান্য উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে”। অখিল জানান, “মেরিন ড্রাইভের পাশে সমূদ্রের ধারে কিছু দোকান ছিল। কিন্তু একটানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সমূদ্র ভাঙনের ফলে প্রায় ২৫টি দোকান জলের তলায় চলে যাওয়ার উপক্রম হয়। তাদের দোকানের পেছনেই ফরেস্টের জায়গা ছিল। সেখানে ফাঁকা জায়গা, মেলা বসে, পর্যটকরা ওখানে এসে বসে। বুধবার রাত্রিবেলা ওরা প্রাণ বাঁচাতে দোকানগুলোকে কিছুটা সরিয়ে নিয়ে যায় ফরেস্টের জায়গাতে। নন্দী বাঁধ সারানোর জন্য বোল্ডার ফেলা চলছিল, সেই কাজে সহযোগিতা করতেই ওরা সরে যায়”। 

      অখিলের অভিযোগ, “অঝোরে বৃষ্টিপাত চলাকালীন গভীর রাতে ওই দোকানগুলিকে ফরেস্ট অফিসার কেটে দিয়েছে। আমি আজ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই দোকানদারদের বসার জায়গা দেখিয়ে দিয়েছি” বলে জানিয়েছেন তিনি। যদিও এই ঘটনার বিষয়ে ফরেস্ট অফিসার মনীষা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। রেঞ্জের অফিস সূত্রে জানা গেছে তিনি বিষয়টি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী কে জানিয়ে এর বিহিত চাইবেন।

      Share

      Leave a Reply

      Your email address will not be published. Required fields are marked *