গৌরীশংকর মহাপাত্র :এগরা কাঁথি : পূর্ব মেদিনীপুর।কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজের কৃতি ছাত্র ও প্রাক্তন অধ্যাপক ড: কৃষ্ণানন্দ দে (৮১) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন ৩১শে মার্চ বুধবার। মৃত্যুকালে ৪ বিবাহিতা কন্যা- জামাতা- নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণমুগ্ধ ছাত্র-ছাত্রী ও শুভানুধ্যায়ীদের ছেড়ে অমৃত লোকে পাড়িদেন। স্ত্রী আগেই প্রয়াত হয়েছেন। মাস খানেক আগে কাঁথি পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের খড়কিবাড়ে নিজ বাসভবনে বাথরুমে পড়ে পড়ে আহত হন অশতিপর সাহিত্যিক। কোমরের হাড় ডিসলোকেট হওয়ায় কলকাতার শিশুমঙ্গলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৫ ই মার্চ অস্ত্রোপচার হয়, ৩০শে মার্চ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার কথা, কিন্তু পরের দিন তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। বৃহস্পতিবার তার মরদেহ ময়নাতদন্তের পর কাঁথি আনা হলে খড়্গচন্ডী মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। জন্ম সূত্রে ভগবানপুর থানার বড়াইবাড়ে। অধ্যাপনা শুরু মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর মহাবিদ্যালয়ে, পরে আসেন কাঁথি পি কে কলেজে। অধ্যাপনার পাশাপাশি সমবায়, গ্রন্থাগার, সাংস্কৃতিক কাজকর্মে তিনি নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। কন্টাই কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কে এক সময় ভাইস চেয়ারম্যান (১৯৭৭- ০৫-১২-৭৯) , দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন- ক্ষেত্রমোহন বিদ্যাভবন, শতাব্দী প্রাচীন কন্টাই ক্লাব, কন্টাই মহকুমা লাইব্রেরী, কাঁথি বীরেন্দ্রসৌধ অচ্ছি পরিষদ, কন্টাই রোটারী ক্লাব প্রভৃতি। কাঁথি ক্লাবের সহযোগিতায় ও তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় বেসরকারি উদ্যোগে কাঁথিতে প্রথম বইমেলার সূত্রপাত ১৯৮৬ তে। তাঁরই উদ্যোগে বীরেন্দ্র স্মৃতিসৌধের সাংস্কৃতিক মঞ্চে প্রতিমাসে নিয়মিত বসত সাহিত্য চর্চার আসর। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ড: শুদ্ধসত্ত্ব বসুর তত্ত্বাবধানে তাঁর ডক্টরেট লাভ। প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা বেশ কয়েকটি বই। কবি চিত্ত সাউ, অধ্যাপক প্রণব মাইতি, অধ্যাপক সুশান্ত কুমার দাস, অধ্যাপক কল্যাণ দাস, অধাপক ড: সুধাংশু শেখর শাসমলের সঙ্গে দীর্ঘসময় সাহিত্য সাধনা করেছিলেন। কলেজ শেষে ৫-৭টা মধুক্ষরার আড্ডায় উপস্থিতি ছিল নিয়ম মাফিক। কলেজে পাঠদান কালে তিনি বিষয়ে নিজেকে ও ছাত্র ছাত্রীদের এমন আচ্ছন্ন করে রাখতে পারতেন তা কোনো ভাবে ভোলার নয়। তাঁর মৃত্যুর খবরে অনুগামী মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে।
তাঁর মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করে আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক মন্মথ নাথ দাস শোক ব্যক্ত করে জানান -” কবি ও প্রাবন্ধিক হিসেবে তিনি খ্যাতিমান ছিলেন । লিখেছেন কবিতা–স্বগত সংলাপ, প্রবন্ধ–লোককান্ত মেদিনীপুর, কবি অমিয় চক্রবর্তী : সঙ্গ ও প্রসঙ্গ। সম্পাদিত বই–আধুনিক প্রেমের কবিতা, বাংলাসাহিত্যে ছদ্মনামের মালা( সহযোগী জগন্নাথ দাস)। বলেন তিনি লেখেন–
“কোনদিন ছিল কি কবিতা
অস্তরাগে তারা নিবেদিতা
শুরু হয় স্মৃতির বলয়
জনহীন পূর্ণিমা আলোয়”
“একাকিত্ব জাগে মধ্যযামে
ফুল ফুটে ওঠে নিরন্তর
নক্ষত্রের নিস্তব্ধ প্রহর
স্পন্দহীন কেন স্মৃতি নামে
নিঃসঙ্গতা উদাত্ত উর্বর।”এমন মানুষের বিয়োগে আমরা শোক বিহ্বল। তাঁর সন্তপ্ত পরিবারে সমবেদনা জানাই।