গৌরীশংকর মহাপাত্র: দৈনিক আবেভূমি: মেদিনীপুর পূর্ব পশ্চিম।চলে গেলেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত জাতীয় শিক্ষক পণ্ডিত তারানন্দ চক্রবর্তী( ৮৭) পঞ্চতীর্থ বাঁকুড়ার এই শিক্ষক প্রয়াত হন।১৯৩৬ সালে বাঁকুড়া জেলার তালডাংরা থানার হাড়মাসড়া গ্রামে সংস্কৃতি মনস্ক,একনিষ্ঠ ব্রাহ্মণ পরিবারে তার জন্ম।পিতা বিজয়কৃষ্ণ ছিলেন কাব্য, ব্যাকরণ স্মৃতি তীর্থ l তিনি স্মৃতির উপাধি পরীক্ষায় স্বর্ণ পদক লাভ করেন।মাতা ভূবন মোহিনী দেবী ছিলেন ধর্মপ্রাণা রমণী l সেই সময়ে সংস্কৃত শিক্ষা দানের জন্য বিজয় বাবুর নিজস্ব টোল ছিল । পিতার টোল বা চতুস্পাঠি থেকেই তারানন্দ বাবু কাব্য, ব্যাকরণ, পৌরোহিত্য সহ মোট পাঁচটি বিষয়ে উপাধি অর্জন করেন l বাঁকুড়া জেলার সারেঙ্গা থানার জাম্বনি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহ শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্ম জীবন শুরু। পরবর্তী সময়ে শিক্ষা দপ্তরের অনুমতিক্রমে সংস্কৃত ভাষায় স্নাতক, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং বি. এড ট্রেনিং নেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে এই বিদ্যালয়ে দীর্ঘ দিন কর্ম রত ছিলেন l সংস্কৃত বিষয়ে তিনি ছিলেন সুপণ্ডিত l সমাজ ও শিক্ষায় উল্লেখ যোগ্য অবদানের জন্য ২০০১ সালে রাষ্ট্রপতি জাতীয় শিক্ষকের সম্মানে সম্মানিত করেনl রাজ্য সরকার থেকেও সম্মানিত হয়েছিলেন তিনি l কলকাতা সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও পেয়েছেন বিশেষ সাম্মানিক l দক্ষিনী কবি শ্রী অট্টুর বালভট্ট কর্তৃক বিরচিত ‘ শ্রী রামকৃষ্ণ কর্ণামৃতম ‘ গ্রন্থটির বঙ্গানুবাদ করে পাঠক সমাজের কাছে যথেষ্ট যশস্বী হয়েছিলেন তারানন্দ বাবু। করোনা উদ্ভুত পরিস্থিতিতে যখন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল জন জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ, সেই সময় তারানন্দ বাবু তাঁর পেনশন একাউন্ট থেকে সঞ্চিত অর্থের বেশ কিছু অংশ দুঃস্থ মানুষের সেবার জন্য বারবার তুলে দিয়েছিলেন রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাতে l বিভিন্ন পত্র পত্রিকা, শারদীয়া সংখ্যাতে নিয়মিত ভাবে তাঁর লেখনী থেকে বিচ্ছুরিত হতো তথ্য সমৃদ্ধ বিভিন্ন রচনা l অবশেষে সাতাশি বছর বয়সে থেমে গেলো তাঁর কলম। থেমে গেলো হৃদয়ের স্পন্দন।পাড়ি দিলেন অমৃতলোকে।রেখে গেলেন মানবসেবার অনন্য নজির ।তারানন্দ বাবুর প্রয়ানে তাঁর গুনমুগ্ধ ছাত্র- ছাত্রী ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।